সংক্ষিপ্ত বিবরণে ইমাম বুখারি (র.)- এর জীবনী



 

ইমাম  বুখারি  (র.)


ইমাম বুখারি (র.) এর নাম মুহাম্মদ। তাঁর  উপনাম আবু আব্দুল্লাহ । তাঁর পিতার নাম ইসমাইল এবং দাদার নাম ইবরাহিম । তাঁর  উপাধি ''আমিরুল মু'মিনুন হাদিস' (হাদিস বর্ণনায় মুমিনদের নেতা) । 
তিনি ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির লালন কেন্দ্র বুখারা নগরীতে ১৯৪ হিজরি ১৩ শাওয়াল, ৮১০ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন । বাল্যকালেই তাঁর পিতার ইন্তেকাল করেন । মায়ের স্নেহ ও ভালবাসায় তিনি বড় হন । 



    জ্ঞান অর্জন

    বাল্যকাল থেকেই জ্ঞানের প্রতি তাঁর ছিল প্রবল আগ্রহ । তিনি খুবই তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী ছিলেন ।
    ফলে ছয় বছর বয়সেই পবিত্র কুরআন হিফজ(মুখস্থ) করে ফেলেন । দশ বছর বয়স থেকেই হাদিস মুখস্ত করা আরম্ভ করেন । ১৬ বছর বয়সেই তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক ও আল্লামা ওয়াকি-এর লেখা হাদিস গ্রন্থদ্বয়  মুখস্থ করেন । 
    অতঃপর তিনি তাঁর মা ও ভাইসহ হজ করতে  পবিত্র মক্কা নগরীতে গমন করেন । সেখানে তিনি হিজাযের  মুহাদ্দিসগণের কাছ থেকে হাদিস শাস্ত্র শিক্ষা লাভ করেন । একাধারে ছয় বছর হাদিস বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার পর তিনি হাদিস সংগ্রহ করার জন্য কুফা, বাগদাদ,বসরা, মিসর, সিরিয়া, আসকালান, হিমস, দামিশক  ইত্যাদি স্থানে গমন করেন । তিনি লক্ষাধিক হাদিস সনদসহ মুখস্ত করেন । তিনি স্বাধীনচেতা ও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন বিধায় কোন রাজা-বাদশার দরবারে গমনাগমন করতেন না । 


    বুখারি শরিফ সংকলন


    ইমাম বুখারি দীর্ঘ ১৬ বছর সাধনা করে ৬ লক্ষ হাদিস থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৭২৭৫ টি হাদিস বুখারি শরীফে লিপিবদ্ধ করেন । প্রত্যেক হাদিস লেখার পূর্বে তিনি অজু ও গোসল করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তেন । অতঃপর ইস্তেখারা (স্বপ্নে কল্যাণকর বস্তু পাওয়ার আবেদন) করতেন । বিশুদ্ধ মনে হলে সেই হাদিস লিখতেন । হাদিসবিশারদ ও উলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ পোষণ করেছেন যে, পৃথিবীতে আল-কুরআনের পর বুখারি শরিফই হলো সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ । এটি ছাড়াও তিনি বিভিন্ন বিষয়ে আরও অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন । জ্ঞান সাধনায় ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করলে যে স্মরণীয় ও বরণীয় হওয়া যায় ইমাম বুখারী তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ।


    বুখারা ত্যাগ 


    ইমাম বুখারী দীর্ঘ সাধনা শেষে বুখারায় এলে  তৎকালীন বাদশা খালিদ ইবনে আহমেদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয় । বাদশাহ ইমাম বুখারির ইলমে হাদিসের গভীর জ্ঞানের  কথা শুনে তার কাছ  থেকে হাদিস শোনার জন্য তাকে রাজদরবারে ডেকে পাঠালেন । ইমাম বুখারি বললেন, ''আমি হাদিসকে রাজদরবারে নিয়ে অপমান করতে চাই না । তার প্রয়োজন হলে সে আমার ঘরে বা মসজিদে আসুক'' ।
    অতঃপর বাদশাহ তাকে বুখারা ত্যাগে বাধ্য করলে  তিনি সমরকন্দে চলে যান ।


    স্মৃতিশক্তি


    ইমাম বুখারি ছিলেন অগাধ স্মৃতিশক্তির  অধিকারী । তিনি যা দেখতেন বা শুনতেন তা তাঁর আজীবন মনে থাকত । তার বয়স যখন এগারো তখন 'দাখেলি' নামক এক মুহাদ্দিস তাঁর সামনে হাদিস বর্ণনায় ভুল করলে তিনি তা শুদ্ধ করে দেন । উপস্থিত সবাই ইমাম বুখারীর মেধা দেখে আশ্চর্যান্বিত  হলেন ।

    সমরকন্দের  প্রসিদ্ধ চারশত হাদিসবিশারদ তাঁর হাদিস মুখস্তের পরীক্ষা নেন । তিনি তাতে অত্যন্ত সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হলে সবাই তাঁকে সে যামানার শ্রেষ্ঠ হাদিসবিশারদ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় । বর্ণিত আছে  যে, তার নব্বই হাজারের  উপরে ছাত্র ছিল যারা তাঁর কাছ থেকে শিখেছেন । 



    বিশেষ দ্রষ্টব্য ঃ উল্লিখিত  অংশগুলো বিভিন্ন ইসলামিক পাঠ্য বই থেকে  সংগৃহীত করা হয়েছে ।

    ধন্যবাদ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ